ঢাকা, ডিসেম্বর ১০ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো করোনাভাইরাস মহামারীতে চাকরি হারানো বা রোজগার কমে যাওয়া হাজার হাজার বাংলাদেশি গার্মেন্টকর্মীদের সাহায্য করার জন্য একটি সহায়তা কার্যক্রমে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি সহায়তা প্রদান করবে, বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ বছরের শুরুতে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাদের ব্যবসা বন্ধ রাখায় বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়ে যায়— যাতে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের নতুন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের অধীনে, তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাদুকা শিল্পের শ্রমিকদের তিন মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে নগদ ৩,০০০ টাকা করে সহায়তা (৩৫.৩০ ডলার) প্রদান করা হবে।
এই কার্যক্রমে জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলে বাংলাদেশকে ১১৩ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা এ বছরের শুরুতে মায়ানমারের গার্মেন্টকর্মীদের জরুরি সাহায্য প্রদান করেছিলো।
বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি রেনজে তিরিঙ্ক এ বিষয়ে বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতে যে শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন তাদেরকে অর্থ সহায়তার মাধ্যমে, এই কার্যক্রমটি মূলত বেকার ও দুস্থ শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষায় একটি তাৎক্ষণিক উদ্যোগ।”
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইনের মতে, ক্রয়াদেশ বাতিল করার কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা ৫.৮ বিলিয়ন ডলারের মজুরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ সাম্প্রতিক মাসে কিছু ক্রয়াদেশ পেয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুরু করেছে, কিন্তু কারখানা মালিকরা বলছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাজারে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ক্রয়াদেশ পেতে দেরি হচ্ছে বা ক্রেতারা মূল্য পরিশোধে বিলম্ব করছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় চার মিলিয়ন লোক কাজ করেন এবং তাদের বেশির ভাগই নারী। এই খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
দেশের গার্মেন্ট মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন গত আগস্ট মাসে বলেছে যে অন্তত ৭০,০০০ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নগুলো দাবি, বাস্তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে।
সম্ভাব্য সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি কারণ বাংলাদেশ সরকার এই খাতের সংগঠনগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কোনো তালিকা পায়নি।
একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ পাওয়ার পর সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমটি পরিচালিত হতে পারে।
শ্রম বিভাগের মিজানুর রহমান বলেন, “এই অর্থসহায়তা উদ্যোগটি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের প্রথম ধাপ। অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী এবং নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলমান রাখার পরিকল্পনা করেছি।”
শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা এই কার্যক্রমকে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বলে প্রচার করার জন্য সরকারের সমালোচনা করে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে এবং সহায়তার জন্য ছোট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলে অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তার বলেন, “যদি কোনো অর্থসাহায্যদাতা না থাকে তখন কী হবে? শ্রমিকদের সহায়তা করতে আমাদের একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা দরকার।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.
