ঢাকা, ডিসেম্বর ৮ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে পুরোনো জাহাজ-ভাঙা শিল্পের বিপজ্জনক কর্মপরিবেশকে নিরাপদ করার উদ্যোগের গতি কমে গেছে। সম্প্রতি একজন শ্রমিকের মৃত্যুর পর বাংলাদেশি কর্মকর্তারা এই মন্তব্য করেছেন।
কোভিড-১৯-এর কারণে এ বছরের শুরুতে জাহাজ-ভাঙা শিল্প অস্থায়ীভাবে বন্ধ ছিলো। বাংলাদেশ বিশ্বের বেশির ভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত জাহাজেরই প্রধান গন্তব্য। এ অবস্থায় ২০২৩ সালের মধ্যে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা তা ধীর হয়ে পড়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের সক্রিয় ৭০টি জাহাজ-ভাঙা কারখানা শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি প্লান জমা দিয়ে আসছে। এটি হলো জাহাজ-ভাঙা শিল্পকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি।
কিন্তু শুধুমাত্র একটি কারখানা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করেছে, যেখানে নিরাপদ ও পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে পুরোনো জাহাজ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হবে।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত নন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে এ বিষয়ে বলেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে এবং তারা ক্ষতির মুখেও পড়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “তারা যে সব অগ্রগতি সম্পন্ন করছে কোভিডের কারণে তা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।”
অধিকারকর্মীদের মতে, পৃথিবীর বেশির ভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত জাহাজ, যা প্রায়ই বিষাক্ত পদার্থে পরিপূর্ণ থাকে, দক্ষিণ এশিয়ায় হাত দিয়ে ভাঙা হয়, এবং এ প্রক্রিয়ায় পরিবেশবিষয়ক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় খুবই সামান্য।
নিরাপদ জাহাজ-ভাঙা শিল্প নিশ্চিত করতে কাজ করা বেসরকারি জোট শিপব্রেকিং প্লাটফর্মের মতে, গত বছর বিশ্বজুড়ে যে ৬৭০টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশের কাজ হয়েছে বাংলাদেশে। এই বিভাগে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন।
২০০৯ সালের হংকং সম্মেলনকে অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণের পর, ২০২৩ সালের মধ্যে জাহাজ-ভাঙা শিল্পকে নিরাপদ করার জন্য বাংলাদেশ একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে জাহাজ-ভাঙা শিল্পের বিপজ্জনক পরিস্থিতি উন্নত করা।
টনেজের হিসেবে যে সব দেশ অন্তত ৪০% ভাগ জাহাজ ভাঙে, তাদের অনুমোদনের পর হংকং সম্মেলন কার্যকর হবে। আপাতত এটি প্রায় ৩০%।
নিরাপত্তা
অলাভজনক সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের মতে, ২০১৯ সালে ২৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিলো, এ বছর যা কমে হয়েছে সাতজন।
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব বন্দরে, যেখানে বাংলাদেশের বেশির ভাগ জাহাজ-ভাঙা কারখানা অবস্থিত, ৩৫-বছর বয়সী একজন কর্মী একটি ভাঙতে থাকা জাহাজের ইঞ্জিন রুম থেকে পড়ে মারা যান।
এম.এ শিপ ব্রেকিং নামের কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার আলম বলেন, “এভাবে আমাদের পরিবারের একজন সদস্যকে হারানো খুবই দুঃখের ঘটনা… আমরা আমাদের শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান করি, কিন্তু এটি ছিলো একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা।”
নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের একমাত্র কারখানা হলো পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করার জন্য যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কঠিন।
ইসলাম বলেন যে তার প্রতিষ্ঠানকে একটি “দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ” নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা এই কাজের জন্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছি। আমাদের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তাদের ভারত ও সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছি। আমরা ইউরোপ থেকে প্রশিক্ষক এনে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।”
খালি পায়ে কাজ করা কর্মীদের যখন গামবুট, নিরাপত্তা জুতা, হেলমেট এবং বয়লার স্যুট পরার জন্য বলা হয়েছিলো, প্রাথমিকভাবে তারা রাজি হননি।
ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “শ্রমিকদের মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, তবে তারা এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এই পরিবর্তন আমাদের এখানে ঝুঁকির আশঙ্কা প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে।”
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৫০০,০০০ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৭,০০০ মৃত্যুবরণ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কারখানা মালিকদের লোকসান হয়েছে, এবং তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে শ্রমিক পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলাম।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করা ইসলাম বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ৬০টি কারখানার মানোন্নয়ন করা হবে, কিন্তু এখন তা হয়তো প্রায় ৪৫-এ নেমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, “দুর্ভাগ্যক্রমে, কোভিডের কারণে, পুরো প্রক্রিয়া হয়তো এক বছর দেরিতে সম্পন্ন হবে।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.
