ঢাকা, নভেম্বর ১০ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - অভিবাসীদের অপহরণ ও হত্যার মতো ঘটনা রুখতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সন্দেহভাজন মানবপাচারকারিদের তথ্য ইন্টারপোলকে দিয়েছে, মঙ্গলবার এক পুলিশ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
পলাতক প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার লাল তালিকাভুক্ত হয়েছেন মিন্টো মিয়া। তাকে ধোঁকাবাজ চাকরিপ্রার্থী ও মুক্তিপণের দাবিতে লোকজনকে “অন্যায়ভাবে জিম্মি ও হত্যা করার” জন্য দায়ী করা হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ সুপারিনটেনডেন্ট সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, তিনি ছয়জন বাংলাদেশির মধ্যে প্রথম যার যাকে ধরার জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলো অন্তত ৭,০০০ এমন লোকের অবস্থান ও গ্রেপ্তারের জন্য সহায়তা চেয়েছে।
তিনি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, “বিদেশি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে এরা বাংলাদেশি লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ধোঁকাবাজি করে। এরপর তারা লোকজনকে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে এবং আরো টাকার জন্য অত্যচার করে।”
তিনি আরো বলেন, “ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত হওয়ায় তাদের চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়বে, কারণ তারা যে দেশেই যাক না কেনো, সেখানেই তাদের ধরে ফেলা হবে।”
হত্যা, জালটাকা তৈরি এবং পর্নগ্রাফি সরবাহরের মতো অপরাধে অন্তত ৭০ জন পলাতক বাংলাদেশি ইন্টারপোলের লাল তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মামলার মুখে পড়বেন বা কেউ শাস্তি ভোগ করবেন।
মানবপাচারের জন্য বাংলাদেশ খুবই ভঙ্গুর এলাকা, এবং একই সাথে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবসম্পদ রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি। প্রতি বছর অন্তত ৭০০,০০০ বাংলাদেশি কাজের জন্য বিদেশ যান। বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বৈদিশিক মুদ্রা আয়ের উপর নির্ভরশীল দেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের অভিবাসীদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিদেশে যেতে হয় কারণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বেশির ভাগই অননুমোদিত দালালদের উপর নির্ভরশীল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর মাধ্যমে ধোঁকাবাজি ও মানবপাচারের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
হোতাচক্র
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসনের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ পাচার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া বিচারের হার খুবই কম।
গত জুন মাসে বিদেশে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা ৫০ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় পুলিশের মতে, এটি ছিলো এ যাবতকালে পাচারচক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে “শক্তিশালী অভিযান”।
এর ঠিক আগের মাসেই লিবিয়াতে ২৪ জন বাংলাদেশি অভিবাসী অপহৃত ও খুন হন। পুলিশের মতে, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে পাচারক্রের একজন শীর্ষ হোতা ছিলেন, তিনি গত এক দশকেরও বেশি সময়ে অন্তত ৪০০ জনকে লিবিয়া পাঠিয়েছেন।
জান্নাত আরা বলেন, শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অভিযানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে লাল তালিকা পাঠিয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, শিগগিরই অন্যান্য দেশের “পাচারচক্রের হোতাদের পরিচয়” যোগ করা হবে।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসেরএকজন শ্রম কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমি মনে করি ইন্টারপোলের শরণ নেওয়া একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।”
তিনি আরো বলেন, “আশা করি এর মাধ্যমে পাচারচক্রের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা যাবে এবং বাংলাদেশিদের পাচার হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে...। এই উদ্যোগ কতোটা কার্যকর তা দেখতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী সংস্থা আইওএম-এর মতে, লিবিয়াতে অন্তত ২০,০০০ বাংলাদেশি আছেন, যারা ইউরোপের ঢোকার পথ হিসেবে সেখানে আছেন, এবং যা অভিবাসী জনসংখ্যার অন্তত ৩%।
২০১৮ সালে পাচারের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে ফেরা বাংলাদেশি অভিবাসী হাসান ইন্টারপোলের সহায়তায় পাচারকারিদের শায়েস্তা করার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, “পুলিশ চাইলে পাচারকারিদের ধরতে আমি সহায়তা করতে পারি, কারণ আমি যন্ত্রণাটা বুঝি...। দেশে ফেরার দুই বছর হয়ে গেলেও আমি এখনো হারানো টাকা ফেরত পাইনি,” ৪২ বছর বয়সী হাসান তার নামের প্রথম অংশ গোপন করে এই মন্তব্য করেন।
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.
